Breaking News
recent

Earthquake Comeing Soon... || ভূমিকম্প শীঘ্রই আসছে ...

কিছুদিন আগে আমাদের অভিজ্ঞতার পর ভূমিকম্পের ভয়াবহতা নিয়ে নতুন কিছু বলার প্রয়োজন নেই। নেপালে ২৫ এপ্রিল ৭ দশমিক ৮ মাত্রার এক ভূমিকম্পে দেশটিতে প্রায় নয় হাজার মানুষ মারা যায় এবং আহত হয় ২৩ হাজারেরও বেশি মানুষ। ভূমিকম্প এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেটি প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে আগে থেকে সতর্ক থাকলে এর ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলগুলো পৃথিবীর অভ্যন্তরে হয়ে থাকে। এই সময়ে বিপুল পরিমাণ সিসমিক তরঙ্গের উৎপত্তি হয়ে থাকে। এর ফলে তৈরি হয় প্রচণ্ড কম্পন ও ঝাঁকুনি, কখনো কখনো মাটির স্থানচ্যুতি হয়ে থাকে। সিসমিক তরঙ্গগুলো দুই ধরনের হয়ে থাকে—একটি ‘পি’ তরঙ্গ এবং অপরটি হলো ‘এস’ তরঙ্গ। ‘পি’ তরঙ্গটি অনেকটা শব্দতরঙ্গের মতো এবং এগুলো সাধারণত গ্রানাইটের মতো পদার্থের মধ্য দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে পাঁচ হাজার মিটার গতিতে স্থানান্তরিত হয়ে থাকে। অপর দিকে ‘এস’ তরঙ্গগুলো এর থেকে প্রায় ৬০ শতাংশ ধীরগতিসম্পন্ন। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির মূল কারণ এই ‘এস’ তরঙ্গ।
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের চার শিক্ষার্থী মো. আক্তার সাদাফ, আসাদুল্লাহ আল গালিব, রাহিনুল হক ও শোয়েব হোসেনের দল তৈরি করেছে এমন একটি যন্ত্র, যেটি ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ করবে। আর সেই পর্যবেক্ষণ থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এই দলের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আছেন একই বিভাগের শিক্ষক তাহিয়া ফাহরিন করিম।
তাঁদের তৈরি করা ইলেকট্রনিক এই যন্ত্রে একটি মূল নিয়ন্ত্রক রয়েছে, যার সঙ্গে যুক্ত থাকে একাধিক সেন্সর নোড। অ্যাকসিলারোমিটার এবং কম্পন সেন্সরের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে এই নোডগুলো, যা ফল্টজোন বা ভূমিকম্পের সম্ভাব্য উৎপত্তির কাছাকাছি রাখতে হবে। এই সেন্সরনোডগুলো দ্রুতগতির ‘পি’ কম্পাঙ্ক শনাক্ত করতে পারে। ভূমিকম্পের সময় উৎপন্ন ‘পি’ তরঙ্গগুলো সাধারণত এক থেকে তিন হার্টজের মধ্যে হয়ে থাকে। আর তাই এগুলো শনাক্ত করার কাজটি সহজ নয়।
রাহিনুল হক বলেন, ‘এই তরঙ্গগুলো শনাক্ত করার জন্য যে ধরনের সেন্সর প্রয়োজন, সেগুলোও অনেক দামি এবং আমাদের দেশে সহজলভ্য নয়।’ তাই তাঁদের এই প্রকল্পে বিকল্প কম ক্ষমতাসম্পন্ন সেন্সর ব্যবহার করতে হয়েছে। মূল নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে যে নোডগুলো যুক্ত থাকে, সেটি তৈরির খরচ মাত্র পাঁচ হাজার টাকা এবং সর্বমোট এই প্রকল্প তৈরি করতে প্রায় ৩২ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করতে খরচ আর এমন থাকবে না।
নোডগুলোয় যে ধরনের সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি ব্যবহার করে রিখটার স্কেলের ৫ মাত্রার ভূমিকম্প শনাক্ত করা যায়। এর থেকে কম মাত্রার ভূমিকম্প শনাক্ত করার জন্য আরও উচ্চমানসম্পন্ন সেন্সর ব্যবহার করতে হবে। দলের অপর সদস্য আক্তার সাদাফ উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক এই ভূমিকম্পের পরই যে তাঁরা কাজ শুরু করেছেন এমন নয়, প্রায় আট মাস ধরে তাঁরা এই প্রকল্প নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।এমন যান্ত্রিক ব্যবস্থা জানাবে ভূমিকেম্পর পূর্বাভাস
সেন্সর নোডগুলো একটি তারহীন নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত থাকে। নোডগুলো ভূমিকম্পের সংকেত পাওয়ামাত্র এটি মূল নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয় এবং এই তরঙ্গগুলো যাচাই করে ফলাফল দেখানো হয়ে থাকে। সহজে সঠিক তথ্য সংগ্রহের জন্য বেশিসংখ্যক নোড ব্যবহার করা উচিত। পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে এই তথ্য যাচাই করা জন্য একটি ডেটাবেইস সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।
ভূমিকম্প শনাক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে এই যন্ত্রাংশের জিপিএস মডিউলের মাধ্যমে সতর্কবার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। যার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। প্রাথমিকভাবে তাঁদের এই যন্ত্রে স্বয়ংক্রিয় টোল নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। স্বয়ংক্রিয় টোলনিয়ন্ত্রকে সতর্কবার্তা পাঠানো হলে এটি যানচলাচল বন্ধ করে দেবে। এ ছাড়া সাধারণ সতর্কতার জন্য শব্দ ও আলোর সতর্কসংকেতের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে এখানে।
এপিএক্সএল৩৪৫ সেন্সর থেকে গ্রহণ করা ডেটা মূল নিয়ন্ত্রক বা কন্ট্রোলারে যাচাই করা হয়। কন্ট্রোলার কেবল এক্স-ওয়াই তলের তথ্যগুলোই গ্রহণ করে। কারণ, ‘পি’ কম্পাঙ্ক এভাবেই কাজ করে থাকে। অ্যাকসিলারেশন-সংক্রান্ত তথ্যগুলো রিখটার স্কেলের তথ্যের সঙ্গে যাচাই করে ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা দেওয়ার কাজটি করে থাকে এই কন্ট্রোলার।
দেশের কাজে ব্যবহার করা যাবে—এমন কিছু উদ্ভাবনের জন্যই এই চার ছাত্র প্রকল্পটি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রাথমিকভাবে এই পর্যায়ে আসতে তাঁদের অনেক পরীক্ষা-নীরিক্ষা ও তথ্য যাচাই করতে হয়েছে। এখন তাঁরা প্রকল্পটি আরও এগিয়ে নিতে চান। তাঁদের ইচ্ছা কার্যকরী একটি ভূমিকম্প শনাক্তকরণ ব্যবস্থা তৈরি করা।

No comments:

Powered by Blogger.