ওয়াইম্যাক্স কি, এর প্রকারভেদ এবং এটি যেভাবে কাজ করে ? || What is WiMAX, the type and the way it works?
ওয়াইম্যাক্স হচ্ছে ‘ওয়ার্ল্ড ইন্টারঅপারেবিলিটি ফর মাইক্রোওয়েব এক্সেসস’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি একটি বিশেষ পদ্ধতির টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি। যার মাধ্যমে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট থেকে শুরু করে পূর্ণাঙ্গ মোবাইল সেলুলার ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের তারবিহীন যন্ত্রে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। IEEE ৮০২.১৬ স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী প্রণীত এর অপর নাম ওয়ারল্যাসম্যান। ২০০১ সালে স্টান্ডার্ড অনুযায়ী প্রযুক্তিটির বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত ওয়াইম্যাক্স ফোরাম ওয়াইম্যাক্স নামটি দিয়েছে। ওয়াইম্যাক্স হচ্ছে প্রচলিত কেবল বা ডিএসএল এর একটি বিকল্প প্রযুক্তি যা শেষ মাইল পযন্ত তারবিহীন ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করে।
ওয়াইম্যাক্স কী
বর্তমানে প্রচলিত ইন্টারনেট কানেকশনের বিকল্পগুলোর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ডায়াল আপ এক্সেস-এ সাধারণত স্পীড স্লো হয়ে থাকে। পিক আওয়ারে অনলাইনে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে। মডেম বা ডিএসএল এর মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড এক্সেস সার্ভিস দেয়া হয় বলে এই পদ্ধতিতে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড এক্সেস পেতে খরচ বেশি হয়।টেলিফোনের ল্যান্ডলাইন ছাড়া এধরণের সংযোগ সম্ভব নয়। এছাড়া মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক অর্থাৎ জিএসএম প্রযুক্তি তৈরী হয়েছিলো টেলিফোনের জন্য। পরে কিছু নতুন টেকনিক্যাল অপশন যুক্ত করার মাধ্যমে ইন্টারনেট সার্ভিসের সুবিধা প্রদান করা হয়। ভবিষ্যতের নেট ব্যবহারের মাত্রা যে হারে বাড়ছে, তাতে এই কম্পাটিবল অপশন দিয়ে কাজ চলবে না একথা নিশ্চিত। ব্যান্ডউইথের সীমাবদ্ধতা ছাড়াও অন্যান্য টেকনিক্যাল কারণে জিএসএম পদ্ধতিতেও উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ সম্ভব নয়। চেষ্টা করলে মিডিয়াম স্পীডের সংযোগ দেয়া যায়। কিন্তু তাতে খরচ অত্যন্ত বেশি।ওয়াইফাই হচ্ছে একটি সীমিত এলাকায় ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক জোন তৈরী করে ওয়াইফাই রয়টারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সংখ্যক গ্রাহককে নেট সুবিধা প্রদান করার একটি ব্যবস্থা। নানা ধরণের সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে সমাজের উচ্চ শ্রেণী থেকে নিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিকট সহজে এবং কম খরচে ইন্টারনেটকে সহজলভ্য করার লক্ষে যাত্রা করা উচ্চগতির বিশেষ ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক হচ্ছে এই ওয়াইম্যাক্স।
প্রকারভেদ
ওয়াইম্যাক্স সার্ভিস প্রাথমিক পর্যায়ে দুই প্রকারের হতে পারে…নন লাইন অফ সাইট
এ’জাতীয় সার্ভিস ব্যবহার করার মাধ্যমে লোয়ার ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ ২গিগা হার্য থেকে ২২গিগা হার্য পর্যন্ত লোয়ার ওয়েভলেন্হ ট্রান্সমিশন সবধরণের বাঁধা কাটিয়ে ওয়াইম্যাক্স রিসিভারে পৌছে দেয়া সম্ভব হয়।
লাইন অফ সাইট
হাইয়ার ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জে এই সার্ভিস ব্যবহার হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে বেশি পরিমানে ডাটা আদান-প্রদান করা যায়। তবে একটা বিশেষ ধরণের সমস্যা ব্যাপারটাকে কষ্টসাধ্য করে তুলেছে। আর সেটা হচ্ছে, এ জাতীয় সার্ভিসে ওয়াইম্যাক্স টাওয়ার এবং ব্যবহারকারীর রিসিভিার এন্টেনার মাঝে কোন প্রতিবন্ধকতা দূর করার কাজ।
এ’জাতীয় সার্ভিস ব্যবহার করার মাধ্যমে লোয়ার ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ ২গিগা হার্য থেকে ২২গিগা হার্য পর্যন্ত লোয়ার ওয়েভলেন্হ ট্রান্সমিশন সবধরণের বাঁধা কাটিয়ে ওয়াইম্যাক্স রিসিভারে পৌছে দেয়া সম্ভব হয়।
লাইন অফ সাইট
হাইয়ার ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জে এই সার্ভিস ব্যবহার হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে বেশি পরিমানে ডাটা আদান-প্রদান করা যায়। তবে একটা বিশেষ ধরণের সমস্যা ব্যাপারটাকে কষ্টসাধ্য করে তুলেছে। আর সেটা হচ্ছে, এ জাতীয় সার্ভিসে ওয়াইম্যাক্স টাওয়ার এবং ব্যবহারকারীর রিসিভিার এন্টেনার মাঝে কোন প্রতিবন্ধকতা দূর করার কাজ।
বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ওয়াইম্যাক্সকে আবারো দুই ভাগে ভাগ করা যায়
ফিক্সড ওয়াইম্যাক্সফিক্সড ওয়াইম্যাক্স IEEE ৮০২.১৬ডি স্টান্ডার্ড এর উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়।এ’ক্ষেত্রে গ্রাহক প্রান্তে একটি রিসিভার টাওয়ার (এন্টেনা) বসানো হয়। ব্যবহৃত হয় ১০গিগা হা. থেকে শুরু করে ৬৬গিগা হা. পর্যন্ত হাই ফ্রিকেয়েন্সি রেঞ্জ। ফিক্সড ওয়াইম্যাক্সের রেঞ্জ এবং ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি বেশি হলেও মোবিলিটি নেই বলে এই পদ্ধতি সাধারণ ব্যবহারকারীদের নিকট জনপ্রিয়তা পায়নি।
মোবাইল ওয়াইম্যাক্স
মোবাইল ওয়াইম্যাক্স IEEE ৮০২.১৬ই স্টান্ডার্ড এর উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়।এক্ষেত্রে গ্রাহক প্রান্তে এজ মডেমের মতো একটি ওয়াইম্যাক্স মডেম ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। ২গিগা হা. থেকে শুরু করে ১১গিগা হা. পর্যন্ত লো ফ্রিকেয়েন্সি রেঞ্জে ট্রান্সমিশন হয় বলে ঘিঞ্জি এলাকার গলির প্যাচ অথবা সূর্যের আলোহীন অন্ধকার কোন বাসায় ওয়াইম্যাক্স সিগন্যাল অনায়াসে ওয়াইম্যাক্স মডেম দিয়ে রিসিভ করা সম্ভব হয়। ফিক্সড ওয়াইম্যাক্সের তুলনায় মোবাইল ওয়াইম্যাক্সের ইনডোর ইউনিট অর্থাৎ মডেমের ক্ষেত্রে ইউজারকে ওয়াইম্যাক্স বেজ ষ্টেশনের কাছাকাছি থাকতে হয়।নাহলে রেডিও সিগন্যাল লস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
মোবাইল ওয়াইম্যাক্স
মোবাইল ওয়াইম্যাক্স IEEE ৮০২.১৬ই স্টান্ডার্ড এর উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়।এক্ষেত্রে গ্রাহক প্রান্তে এজ মডেমের মতো একটি ওয়াইম্যাক্স মডেম ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। ২গিগা হা. থেকে শুরু করে ১১গিগা হা. পর্যন্ত লো ফ্রিকেয়েন্সি রেঞ্জে ট্রান্সমিশন হয় বলে ঘিঞ্জি এলাকার গলির প্যাচ অথবা সূর্যের আলোহীন অন্ধকার কোন বাসায় ওয়াইম্যাক্স সিগন্যাল অনায়াসে ওয়াইম্যাক্স মডেম দিয়ে রিসিভ করা সম্ভব হয়। ফিক্সড ওয়াইম্যাক্সের তুলনায় মোবাইল ওয়াইম্যাক্সের ইনডোর ইউনিট অর্থাৎ মডেমের ক্ষেত্রে ইউজারকে ওয়াইম্যাক্স বেজ ষ্টেশনের কাছাকাছি থাকতে হয়।নাহলে রেডিও সিগন্যাল লস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ওয়াইম্যাক্স এবং ওয়াইফাই এর পার্থক্যঃ
ওয়াইম্যাক্স এবং ওয়াইফাই একই পর্যায়ের প্রযুক্তি। তবে এদের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। ওয়াইফাইয়ের কাভারেজ ৩০ থেকে ১০০ মিটার। আর ওয়াইম্যাক্সের কাভারেজ প্রায় ৫০ কিলোমিটার। ওয়াইম্যাক্স এবং ওয়াইফাইয়ের চেয়ে বেশি ইউজার একসাথে ব্যবহার করতে পারে। ওয়াইফাই অপারেট করে IEEE ৮০২.১৬ স্টান্ডার্ড এর উপর ভিত্তি করে। এর রেঞ্জ সর্বোচ্চ ৩০০ ফুট ব্যাসার্ধ। মাক্সিমাম স্পীড ৫৪ এমবিপিএএস। অপরদিকে IEEE ৮০২.১৬স্টান্ডার্ড অনুযায়ী ওয়াইম্যাক্স এর রেঞ্জ সর্বোচ্চ ৩০মাইল ব্যাসার্ধ। ডাটা ট্রান্সফার রেট ম্যাক্সিমাম ৭০এমবিপিএস।
ওয়াইম্যাক্স এর সুবিধাঃ
ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি তুলনামূলক কম ব্যান্ডউইথ ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। একটি বেজ ষ্টেশন দিয়ে ৪থেকে ৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় তারবিহীন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া যায়। বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার এই সময়ে শহর-বন্দর-গ্রাম, বিচ্ছন্ন জনপদ আর দুর্গম এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌছে দিতে হবে প্রযুক্তির আলো। এ’ক্ষেত্রে ওয়াইম্যাক্স হতে পারে আমাদের ধ্রুপদ বাহন। আগামি প্রজন্মের জন্য সুন্দর, সুস্থ, মানবিক একটি বাসস্থান হয়ে উঠুক পৃথিবী নামক এই গ্রহটি।
সূত্র: বিজ্ঞান প্রযুক্তি
সূত্র: বিজ্ঞান প্রযুক্তি
No comments: